প্রশ্নঃ ইলেকট্রিক অ্যাপ্লায়েন্স বলতে কি বুঝ?
উত্তরঃ ইলেকট্রিক অ্যাপ্লায়েন্স হল নিদিষ্ট কোন কাজ সম্পাদনের জন্য প্রস্তুতকৃত বৈদ্যুতিক ইন্সট্রমেন্ট বা বৈদ্যুতিক ডিভাইস । এ ইলেকট্রিক অ্যাপ্লায়েন্স এর মাধ্যমে মানব সভ্যতায় প্রয়োজনীয় গৃহস্থলীর বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করা হয়। তাই একে ইলেকট্রিক হোম অ্যাপ্লায়েন্সও বলে। যেমনঃ সিলিং ফ্যান, টেবিল ফ্যান, রাইস কুকার, ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, এ সি, হেয়ার ড্রায়ার, ওয়াসিং মেশিন, ব্লেন্ডার, আয়রন, কফি মেকার, কেটলি, স্টোভ, সোল্ডারিং আয়রন, ওয়াটার হিটার, হট প্লেট, টোস্টার, টেলিভিশন, ক্যামেরা ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ বিভিন্ন প্রকার ইলেকট্রিক অ্যাপ্লায়েন্স এর প্রকাভেদ অনুসারে নাম লিখ ।এবং যে কোন সমস্যা হলে তা সমাধানের প্রক্রিয়া লিখ।
উত্তরঃ বিভিন্ন প্রকার ইলেকট্রিক অ্যাপ্লায়েন্স এর প্রকাভেদ অনুসারে নাম হলঃ
- কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স(Kitchen Appliances): মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ডিশওয়াশার ইত্যাদি
- হিটিং অ্যাপ্লায়েন্স(Heating Appliances): রুম হিটার, ইলেকট্রিক কেটলি, ইলেকট্রিক আয়রন ইত্যাদি।
- রেফ্রিজারেশন অ্যাপ্লায়েন্স(Refrigeration Appliances): ফ্রিজ, কোল্ড ড্রিংক মেশিন ইত্যাদি।
- ক্লিনিং অ্যাপ্লায়েন্স(Cleaning Appliances): ওয়াশিং মেশিন, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ইত্যাদি।
- এয়ারকন্ডিশনার অ্যাপ্লায়েন্স(Air Conditioner Appliances): রুম এয়ারকন্ডিশনার, ভেন্টিলেশন ফ্যান ইত্যাদি।
- অডিও-ভিজুয়্যাল অ্যাপ্লায়েন্স(Audio-Visual Appliances): টেলিভিশন, ক্যামেরা ইত্যাদি।
- কসমেটিক কেয়ার অ্যাপ্লায়েন্স(Cosmetic Care Appliances): হেয়ার ড্রয়ার, ইলেকট্রিক শেভার ইত্যাদি।
- অন্যান্য অ্যাপ্লায়েন্স(Other Appliances): স্মোক এলাম, বেল ইত্যাদি।
- ইলেকট্রিক আয়রনঃ
প্রশ্নঃ বৈদ্যুতিক আয়রন কি? কত প্রকার? আলোচনা কর?
উত্তরঃ বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি এমন একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র বা ডিভাইস এর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রুপান্তরিত করে মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। এটি একটি ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্স, যা তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কাপড় মসৃণ করা যায়।
ইলেকট্রিক আয়রনের প্রকারভেদ: ইলেকট্রিক আয়রন প্রধানত তিন প্রকার। যথা:
(ক) সাধারণ আয়রন,
(খ) স্বয়ংক্রিয় আয়রন,
(গ) স্টিম আয়রন।
সাধারন আয়রন ও স্বয়ংক্রিয় আয়রন এর মধ্যে পার্থক্য:
(ক) সাধারন আয়রন: সাধারন আযরনকে কারেন্ট সরবরাহ লাইনে সংযোগ করা হয়, তখন হিটিং এলিমেন্ট তাপ সৃষ্টি করে, ফলে সোল প্লেটটি উত্তপ্ত হয়। যতক্ষণ আয়রনের প্লাগ লাইনে লাগানো থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত হিটিং এলিমেন্ট তাপ সৃষ্টি করতে থাকে। অধিক তাপ রোধের জন্য ব্যবহার কারীরক মাঝে মধ্যেই আয়রনকে কারেন্ট সরবরাহ হতে বিচ্ছিন্ন করতে হয় এবং আবার যখন আয়রন ঠান্ডা হয়, তখন আবার কারেন্ট সরবরাহ সংযোগ করতে হয়। এ প্রকার আয়রনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
(খ) স্বয়ংক্রিয় আয়রন: স্বয়ংক্রিয় আয়রনকে থার্মোস্ট্যাট থাকে, যা কারেন্টকে আপনা-অাপনি অন-অফ করে, ফলে আয়রনটি একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বজায় রাখে। যখন ইস্ত্রিটি তাপমাত্রায় পূর্বনির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে, তখন অটোমেটিকভাবে কারেন্ট প্রবাহ বন্ধ করার জন্য থার্মোস্ট্যাটটি একজোড়ৃ সংযোগ বিন্দুগুলোকে পুনঃবন্ধ করে, ফলে আবার কারেন্ট প্রবাহিত হতে থাকে। ইস্ত্রির হাতলে বা বহিরাবরণে একটি তাপ নিয়ন্ত্রণ নব, ডায়াল থাকে, যার সাহায্যে ব্যবহারকারী কে কাপড় ইস্ত্রি করতে হবে, তার ধরন অনুযায়ী তাপমাত্রা নির্ধারণ করে। নব ঘুরানোর ফলে স্প্রিং এর উপর চাপ কমবেশি হয়। তাতে সংযোগ খুলে যাবার পূর্বে থার্মোস্ট্যাটিক ফলকটি কতটুকু বেঁকে যাবে এবং এ কাজের জন্য কতটুকু তাপমাত্রার প্রয়োজন, তা বির্ধারণ করে। এক ধরনের আয়রন হতে অন্য ধরনের আয়রন গঠনের দিক দিয়ে থার্মোস্ট্যাট বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে।
(গ) স্টিম আয়রনঃ যে আয়রনের উপরের দিকে একটি স্ট্রিম চেম্বার বা ওয়াটার ট্যাংক থাকে। রিলিজ বাটন পুশ করে এই স্ট্রিম চেম্বারটি মাঝে মাঝে পানি দিয়ে পূর্ণ করতে হয় যাতে আয়রনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করা যায় তাকে স্টিম আয়রন বলে।
বৈদ্যুতিক আয়রনের বিভিন্ন অংশ
(১) নন্-অটোমেটিক আয়রন-এর বিভিন্ন অংশ:
পাশে একটি Ordinary Iron এর বিভিন্ন অংশের বর্ণণা দেয়া হলো:
১) সোল প্লেট,
২) হিটিং এলিমেন্ট,
৩) প্রেসার প্লেট বা ওয়েট প্লেট,
৪) আয়রন কেস,
৫) হ্যান্ডেল,
৬) ইনস্যুলেটিং ম্যাটেরিয়্যাল,
৭) টার্মিনাল হাউজিং,
৮) আয়রন সার্পোট।
(২) একটি অটোম্যাটিক আয়রন-এর বিভিন্ন অংশ
নিম্নে Automatic Iron এর বিভিন্ন অংশের বর্ণনা দেয়া হলো:
১) সোল প্লেট,
২) হিটিং এলিমেন্ট,
৩) প্রেসার প্লেট বা ওয়েট,
৪) আয়রন কেস,
৫) হ্যান্ডেল,
৬) ইনস্যুলেটিং ম্যাটেরিয়াল,
৭) টার্মিনাল হাউজিং,
৮) আয়রন সাপোর্ট,
৯) থার্মোস্ট্যাট,
১০) পাইলট ল্যাম্প,
১১) কন্টাক্ট পয়েন্ট,
১২) হিট অ্যাডজাস্টমেন্ট নব ইত্যাদি।
(৩) একটি স্টিম আয়রনের বিভিন্ন অংশ:
১) ছিদ্র যুক্ত নন্ স্টিক সোল প্লেট,
২) টিউব টাইপ হিটিং এলিমেন্ট,
৩) আয়রন স্ট্রিপ কানেকটর ফর হিটিং এলিমেন্ট,
৪) থার্মোস্ট্যাট,
৫) আয়রন কেস,
৬) স্টিম চেম্বার বা ওয়াটার ট্যাংক,
৭) হ্যান্ডেল,
৮) ফিল্টার,
৯) কন্ট্রোল পয়েন্টার বা টেম্পারেচার কন্ট্রোল ডায়াল,
১০) স্কেল,
১১) স্প্রে নজ্ল,
১২) ওয়াটার ট্যাংক রিলিজ বাটন,
১৩) ইন্ডিকেটর লাইট,
১৪) কন্ট্রোল রড,
১৫) রিয়ার কভার,
১৬) কর্ড-গার্ড।
নিম্নে বিভিন্ন প্রকার আয়রনের বিভিন্ন অংশের বর্ণনা দেয়া হলো:
১। সোল প্লেট: সোল প্লেট তৈরি করা হয় কাঁচা লোহা দ্বারা এবং এর নিচের অংশ নিকেল করা থাকে, যা দেখতে কাচেঁর মত লাগে। এর উপরের অংশও সমান। এর মধ্যে প্যাঁচকাটা ছিদ্র আছে। মূলত এটিই উত্তপ্ত হয়ে কাপড় ইস্ত্রি করা হয়।
২। হিটিং এলিমেন্ট: ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইসে হিটিং এলিমেন্ট হলো এমন একটি ডিভাইস বা কয়েল যার মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ার সময় এতে তাপ শক্তির উদ্ভব ঘটে। হিটিং এলিমেন্ট হলো এমন একটি ডিভাইস বা কয়েল যার মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহতি হওয়ার সময় এত তাপ শক্তির উদ্ভব ঘটে। হিটিঙ এলিমেন্ট সাধারণত নাইক্রোম তার দ্বারা তৈরি করা হয়ে থাকে এবং মাইকা শীট দ্বারা প্যাঁচাবে থাকে। এলিমেন্টের উপরে ও নিচের অংশে পুরো মাইকা শীট দ্বারা এলিমেন্টের সাথে রিভেট করা থাকে। ইলেকট্রিক আয়রনের এলিমেন্ট বিভিন্ন ওয়াটের হয়ে থাকে, যেনম- 450, 750 ও 1000 ওয়াট। সাধারণ ইস্ত্রির এলিমেন্ট 450 ও 750 ওয়াটের হয়ে থাকে এবং স্বয়ংক্রিয় আয়রনের এলিমেন্ট 750 ও 1000 ওয়াটের হয়ে থাকে।
৩। প্রেসার প্লেট: প্রেসার প্লেট হিটিং এলিমেন্টকে দুটি মেশিন স্ক্রর দ্বারা চাপ দিয়ে ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যদি প্রেসার প্লেট ঢিলা থাকলে এলিমেন্ট খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাবে। ষোল প্লেটের মতো প্রেসার প্লেটের নিচের অংশ মসৃণ হয়। সোল প্লেট ও প্রেসার প্লেট এর মধ্যে সংযোজন অসমান হলে খুব তাড়াতাড়ি এলিমেন্ট ফিউজ হয়ে যায়। লোহা দ্বারা এ প্রেসার প্লেট তৈরি করা হয়।
৪। কভার ও হাতল: ইস্ত্রির হাতল ও কভারকে হুড অ্যাসেম্বলী বলে। লোহার শীট দ্বারা এর কভার তৈরি করা হয়। এর উপর নিকেল প্লেটিং করা থাকে এবং এর মধ্যে টার্মিনাল বক্স থাকে। এ বক্সের মধ্যে লোহার পাত দ্বারা তৈরি এলিমেন্ট সংওযোগ এর পাত থাকে। কভারটি নাট-বোল্টের সাহায্যে অাটকানো হয় এবং টার্মিনাল বক্সটি একটি ব্যাক কভারের সাহায্যে মেশিন স্ক্রর মাধ্যমে অাটকানো হয়ে থাকে। হাতলের ব্যাকে প্লাস্টিকের তৈরি ইনসুলেটর থাকে।
৫। নির্দেশক বাতি বা পাইলট ল্যাম্প: ইস্ত্রিতে নির্দেশক বাতি বা পাইলট ল্যাম্প রেজিস্টরের সাথে সিরিজে সংযোগ থাকে। পাইলট ল্যাম্প যখন আলো দিবে, তখন বুঝতে হবে লাইন চালু আছে। আর উত্তাপ হিট বেশি হলে থার্মোস্ট্যাট লাইন অফ করে দিলে পাইলট ল্যাম্প আলো দিবে না।
৬। রোটারি সুইচ: ইস্ত্রিতে রোটারি সুইচ এর মাধ্যমে তাপমাত্রা বাড়ানো বা কমানো হয়।
৭। থার্মোস্ট্যাট সুইচ: থার্মোস্ট্যাট এর প্রধান কাজ বৈদ্যুতিক ইস্ত্রির তাপমাত্রাকে কন্ট্রোল করা। অর্থাৎ তাপমাত্রা কম হলে লাইন অন করা ও তাপমাত্রা বেশি হলে লাইন অফ করা।
৮। ইনস্যুলেটিং ম্যাটেরিয়াল: ইস্ত্রিতে ইনস্যুলেটিং ম্যাটেরিয়াল হিটিং এলিমেন্টের উপরে ও নিচের দিকে স্যান্ডউইচ ভাবে থাকে, যাতে কোন সময় হিটিং এলিমেন্ট সহজে বডি হতে না পারে। ইনস্যুলেটিং ম্যাটেরিয়াল হিসেবে , পোর্সিলিন, অ্যাসবেস্টস শীট, মাইকা ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট হতে তথ্য, ছবি সংগৃহীত
No comments:
Post a Comment