ইন্ডাক্টর – Inductorঃ
ইন্ডাক্টর হচ্ছে একটা তারের কয়েল বা অনেকগুলাে প্যাঁচের সমষ্টি। এককথায় একটা তারকে প্যাঁচিয়ে প্যাঁচিয়ে কয়েল বানালে যা হয় তাই একটা ইন্ডাক্টর। ইন্ডাক্টর দুই-প্রান্ত বিশিষ্ট প্যাসিভ বৈদ্যুতিক উপাদান, যখন এটির মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হয়, তখন সেটি একটি চুম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে শক্তি সঞ্চয় করে। বাংলা ভাষায় একে আবেশক নামে অভিহিত করা হয়। বাস্তবে ইহা একটি পরিবাহী তার এর কুন্ডলী।
৩। ইন্ডাক্টর ও ইন্ডাক্ট্যান্সঃ
ইন্ডাক্টর
হলো ডিভাইস বা সার্কিটের উপাদান এবং ইন্ডাক্ট্যান্স হলো উক্ত ডিভাইসের
বৈশিষ্ট বা গুণ, কোন পরিবাহীর মধ্য দিয়ে পরিবর্তনশীল কারেন্ট প্রবাহের
কারণে উৎপন্ন চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রবল্য পরিবর্তনের ফলে ঐ পরিবাহীতে ভোল্টেজ
আবিষ্ট হওয়ার সামর্থ্যকে ইন্ডাক্ট্যান্স বলা হয়। এবং উক্ত পরিবাহীকে
ইন্ডাক্টর বলা হয়। বাস্তবে ইহা একটি পরিবাহী তাড়ের কুন্ডলী।
৪। প্রতীকঃ
বিভিন্ন
ইলেকট্রনিক স্ক্যামিটিক ডায়াগ্রামে ইন্ডাক্টরকে প্রকাশ করার জন্য বিভিন্ন
সিম্বল বা প্রতীক ব্যবহার করা হয়। তা নিম্নে দেখানো হলোঃ
৫। এককঃ
ইন্ডাক্টরের
S.I. একক হেনরী একে ইংরেজি H অক্ষর দ্বারা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু হেনরী
একটি বৃহৎ একক ফলে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে মিলিহেনরী mH রেঞ্জের একক ব্যবহার
করা হয়।
১ হেনরী বলতে কি বুঝায়?
One
henry is the value of self-inductance in a closed circuit or coil in
which one volt is produced by a variation of the inducing current of one
ampere per second.
৬। মূলনীতি ও কার্যপ্রণালীঃ
ক্ষেত্র-১: যখন কোন ইন্ডাক্টরের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ শুরু হয় তখন তড়িৎ প্রবাহের কারণে তাৎক্ষণিক একটি চুম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি হয় যার বলরেখা গুলো ইন্ডাক্টরের প্রতি প্যাচের সাথে জড়িত থাকে। ইন্ডাক্টর নিজস্ব চুম্বক বলরেখার সাথে জড়িত হওয়ার কারণে তড়িৎ প্রবাহ শুরু হবার মুহূর্তে ইন্ডাক্টরে একটি বিপরীতমুখী ভোল্টেজ আবিষ্ট হয় যা ইন্ডাক্টরে তড়িৎ প্রনাহমাত্রা বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে।
ক্ষেত্র–২: ইন্ডাক্টরের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ করলে তড়িৎ প্রবাহের কারণে সৃষ্ট চুম্বক ক্ষেত্রটি হঠাৎ অপসারিত হয় এবং বলরেখাগুলো হারিয়ে যায়। ফলে ইন্ডাক্টরে বিপরীতমুখী ভোল্টেজ হারিয়ে যায় এবং ক্ষণস্থায়ী সমমূখী ভোল্টেজ বৃদ্ধি পায়। একারণে ইন্ডাক্টরে তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ হতে বিলম্ব হয়।
ক্ষেত্র-৩: অনুরূপ ভাবে ইন্ডাক্টরে তড়িৎ প্রবাহ চালু থাকাকালীন যদি প্রবাহ মাত্রা পরিবর্তন করানো হয় তাহলে ইন্ডাক্টরের প্রতি প্যাঁচের সাথে জড়িত চুম্বক বলরেখার প্রবল্যের পরিবর্তন হয় এবং ইন্ডাক্টরে একটি বিপরীতমুখী ভোল্টেজ আবিষ্ট হয় যা তড়িৎ প্রবাহের পরিবর্তনে বাধা প্রদান করে। উপরোক্ত ক্ষেত্রসমূহে উৎপন্ন ভোল্টেজকে বল হয় সব-আবেশিত ভোল্টেজ।
আমরা জানি যে, কয়েল এর মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হলে এর চারপাশে ফ্লাক্স তৈরি হয়, মানে ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হয়। একে ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড বা ইলেক্ট্রো ম্যাগনেট বলে।
যদি কয়েল এর মধ্য দিয়ে ডিসি কারেন্ট প্রবাহিত হয় তাহলে কয়েল এর চতুর্দিকে স্থির
ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হয়। আর যদি এসি কারেন্ট প্রবাহিত হয় তাহলে কয়েল এর
চতুর্দিকে পরিবর্তনশীল ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হয়।
কারেন্ট পরিবর্তন এর সাথে সাথে ম্যাগনেটিক ফিল্ড এর ও পরিবর্তন ঘটে। যেমনঃ কয়েল এ যদি বেশি কারেন্ট প্রবাহিত হয় তাহলে বেশি ফ্লাক্স তৈরি হবে মানে শক্তিশালী ম্যাগনেটিক ফিল্ড, আর যদি অল্প কারেন্ট প্রবাহিত হয় তাহলে অল্প ফ্লাক্স তৈরি হবে মানে দূর্বল ম্যাগনেটিক ফিল্ড।
এখন আমরা জানি ফ্যারাডের ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক ইন্ডাক্সন “ল” অনুযায়ী, যদি কোন কয়েল এ পরিবর্তনশীল কারেন্ট মানে এসি কারেন্ট প্রবাহিত হয় তাহলে কয়েল এর চতুর্দিকে পরিবর্তনশীল ফ্লাক্স তৈরি হয়। এই ফ্লাক্স যদি তার আশে পাশে কোন কয়েল পায় তাহলে সেই কয়েলে ফ্লাক্স কাট হয় ফলে সেই কয়েলে ভােল্টেজ ইন্ডিউসড করে।
আমরা জানি,
ইন্ডিউজড ভােল্টেজ = – N dϕ / dt বা L di/dt
এখানে, N হচ্ছে কয়েল এর টার্ন বা প্যাঁচ, dϕ/dt হচ্ছে পরিবর্তনশীল ফ্লাক্স, L হচ্ছে কয়েল এর ইন্ডাক্ট্যান্স এবং di/dt হচ্ছে পরিবর্তনশীল কারেন্ট। প্যাঁচের সংখ্যা যত বেশি হবে ইন্ডিউসড ভােল্টেজ ও তত বেশি হবে আবার ফ্লাক্স যত বেশি পরিবর্তনশীল হবে ইন্ডিউসড ভােল্টেজ ও তত বেশি হবে।
এসির ফ্রিকুয়েন্সি যত বেশি হবে কারেন্ট ও তত বেশি পরিবর্তনশীল হবে কাজেই ফ্লাক্স ও তত বেশি পরিবর্তনশীল হবে।
যখন কয়েল এর মধ্য দিয়ে পরিবর্তনশীল মানে এসি কারেন্ট প্রবাহিত হবে তখন কয়েল এর চতুর্দিকে পরিবর্তনশীল ফ্লাক্স তৈরি হবে। এখন এই পরিবর্তনশীল ফ্লাক্স পাশে কোন কয়েল না পেয়ে নিজ কয়েলে ফ্লাক্স কাট করে ভােল্টেজ ইন্ডিউসড করবে।
এই ইন্ডিউজড ভােল্টেজ কয়েল এ কারেন্ট প্রবাহিত করলে এতে নতুন ফ্লাক্স তৈরি হবে। এখন এই নতুন ফ্লাক্স ওরিজিনাল ফ্লাক্স কে তৈরি হতে বাধা দিবে। তার মানে হচ্ছে কয়েলের ইন্ডিউজড কারেন্ট ওরিজিনাল কারেন্ট কে কয়েলে স্লো হতে বাধা দিবে।
এটিই হলাে কয়েল এর সেলফ ইন্ডাকট্যান্স। যার কারনে ইন্ডিউসড ভােল্টেজ ইকুয়েশন এর আগে একটি (-) চিহ্ন দেয়া হয়। এটি দিয়েছেন বিজ্ঞানী Lenz। তিনি বলেছেন যে ইন্ডিউসড ইফেক্ট এমন যে, সেটা যে কারনে তৈরি হয় সেই কারন কেই বাধা দেয়।
যদিও ইন্ডাক্টর পরিবর্তনশীল কারেন্ট প্রবাহিত হতে বাধা দেয় তার সেলফ ইন্ডাক্ট্যান্স এর কারনে কিন্তু কারেন্ট ম্যাগ্নিচুড কে বাধা দেয় না। যেমন কোন সার্কিট এ ১০ এম্পিয়ার কারেন্ট প্রয়ােজন হলে ইন্ডাক্টর ১০ এম্পিয়ার ই কারেন্ট সরবরাহ করবে কিন্তু সেলফ ইন্ডাক্ট্যান্স এর কারনে কারেন্ট বাধা প্রাপ্ত হয়ে সরবরাহ করবে।
অন্যদিকে ইন্ডাক্টরে ডিসি কারেন্ট যার ফ্রিকুয়েন্সি জিরাে মানে অপরিবর্তনশীল কারেন্ট সরবরাহ করলে ইন্ডাক্টর ধীরে ধীরে ম্যাগনেটিক ফিল্ড আকারে এনার্জি স্টোর করবে। যতক্ষণ না সে একটি শক্তিশালী ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেট এ পরিণত হয় ততক্ষণ সে কারেন্ট পরিবহণ হতে বাধা দিবে। যখন সে সম্পন্ন রুপে একটি শক্তিশালী ম্যাগনেট এ পরিণত হবে তখন সে আর কারেন্ট পরিবহন হতে বাধা দিবে না।
কারণ সে একটা স্থির ইলেক্ট্রো ম্যাগনেট এ পরিণত হবে যার ফ্লাক্স অপরিবর্তনশীল যেটা নিজ কয়েল এ ভােল্টেজ ইন্ডিউজড করতে পারবে না, কাজেই সেটা একসময় আর কারেন্ট পরিবহণ এ বাধা দিবে না ফলে সেটা একটা রেজিস্টর এর মত আচরণ করবে।
৭। খাটি ইন্ডাক্টরের বৈশিষ্টঃ
১।খাটি ইন্ডাক্টরে রেজিস্ট্যান্স শূন্য হয়।
২।খাটি ইন্ডাক্টরে পাওয়ার অপচয় শূন্য।
৩।ইন্ডাক্টর কারেন্টের পরিবির্তঙ্কে বাঁধা দেয়।
৪।ইহা এনার্জি সঞ্চয় করে রাখতে পারে।
৫।ভোল্টেজ ও কারেন্টের মধ্যে দশা পার্থক্য ৯০ ডিগ্রী।
৬।খাটি ইন্ডাক্টর ডিসি প্রবাহকে বাঁধা দেয় না।
৭।দিকপরিবর্তী প্রবাহের কম্পাঙ্ক বৃদ্ধি পেলে ইন্ডাক্টরের বাঁধা বৃদ্ধি পায়।
৮। প্রকারভেদঃ
বর্তমানে প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের কারণে ইন্ডাক্টরের প্রয়োগ ক্ষেত্র ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রুপে ইন্ডাক্টর ডিজাইন হচ্ছে তাই ইন্ডাক্টরের প্রকৃত প্রকারভেদ নির্ণয় করা বেশ কঠিন। তবে এদের ব্যবহার ও গঠনের দিক দিয়ে বেশ কিছু তারতম্য চোখে পড়ে।
যেমনঃ কোরের উপাদানের উপর ভিত্তি করে তা কয়েক প্রকার হয়ে থাকে।
১।এয়ার কোর ইন্ডাক্টরঃ
এই
ধরণের ইন্ডাক্টরগুলি সাধারণত বেতার প্রকৌশলে বেশি ব্যবহার করা হয়। কারণ
বেতার প্রকৌশলে সাধারণত কম মানের ইন্ডাক্ট্যান্স প্রয়োজন হয়। এই ধরণের
ইন্ডাক্টর সমূহে কোর ম্যাটিরিয়াল হিসাবে থাকে বায়ু এবং ইহারা উচ্চ
কোয়ালিটি ফ্যাক্টর বিশিষ্ট এবং সংখ্যা কম হয়ে থাকে।
২।আয়রন কোর ইন্ডাক্টরঃ
আয়রন
কোর ইন্ডাক্টর সমুহে কোর হিসাবে আয়রন শীট ব্যবহার করা হয়। এগুলির
ইন্ডাক্ট্যান্স বেশি থাকে। সাধারণত চোক কয়েল এবং ট্রান্সফর্মারে এগুলি
ব্যবহার করা হয়।
৩।ফেরিক কোর ইন্ডাক্টরঃ
এই ধরণের ইন্ডাক্টরে কোর হিসাবে ফেরিট রড ব্যবহার হয়। এগুলির ব্যবহার বেশি দেখা যায়। এই ইন্ডাক্টরের ইন্ডাক্ট্যান্স বেশি থাকে।
গঠন আকৃতির উপর ভিত্তি করে তা কয়েক ধরণের হয়ে থাকে।
১।ববিন বেজড ইন্ডাক্টরঃ
এই
ধরণের ইন্ডাক্টরগুলি সিলিন্ড্রিক্যাল ববিন আকৃতির হয়ে থাকে। সাধারণত
পিসিবিতে সারফেস মাউন্ট ইন্ডাক্টর তৈরিতে এগুলি ডিজাইন করা হয়। এছাড়া
ট্রান্সফর্মারগুলি ববিন বেজড ইন্ডাক্টরের উদাহরণ।
২।টরিডাল ইন্ডাক্টরঃ
এই
ধরণের ইন্ডাক্টরে বৃত্তাকৃতির ফেরিট রডের ফর্মার উপর তার জড়িয়ে
ইন্ডাক্টর তৈরি করা হয়। অর্থাৎ বৃত্তাকার ফেরিট রডের ফর্মা কোর হিসাবে
ব্যবহার হয়।
০৯। মান লিপিবদ্ধ করার পদ্ধতিঃ
ইন্ডাক্টরের
মান সাধারণতঃ ইন্ডাক্টরেরের গায়ে মাইক্রোফ্যারাড কিংবা পিকোফ্যারাড
রেঞ্জে লিখা থাকে। অনেক ইন্ডাক্টরেরের মান ইন্ডাক্টরের গায়ে সরাসরি
মাইক্রোফ্যারাড কিংবা পিকোফ্যারাড রেঞ্জে না লিখে কোডিং পদ্ধতিতে লিখা হয়।
ইলেকট্রনিক ইন্ডাসট্রিজ এলিয়েন্স কর্তৃক নির্ধারিত এই কোডিং পদ্ধতি নিচে
দেয়া হলোঃ
১০। সমবায়ঃ
অনেক সময় বাজারে কাংখিত মানের ইন্ডাক্টর পাওয়া যায় না। তখন একাধিক ইন্ডাক্টর সমবায়ের মাধ্যমে কাংখিত মান তৈরী করে ব্যবহার করা যায়। যেমনঃ দুটি ১০ মিলিহেনরী ইন্ডাক্টর শ্রেনী সমবায়ের মাধ্যমে ২০ মিলিহেনরী সৃষ্টি করা যায়। আবার ২ টি ১০ মিলিহেনরী ক্যাপাসিটর সমান্তরাল সমবায়ের মাধ্যমে ০৫ মিলিহেনরী সৃষ্টি করা যায়। সমবায়ের মান নিম্নের সূত্রের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়ঃ
১১। ইন্ডাক্টরের ব্যবহারঃ
১।রেডিও রিসিভারে LC ট্যাংক সার্কিটে বা টিউনিং সার্কিটে।
২।রেজোন্যান্স সার্কিটি।
৩।ফিল্টার সার্কিটে।
৪।চোক কয়েল হিসাবে।
৫।ট্রান্সফর্মার, মটোর, জেনারেটরে।
৬।সলিনয়েড বা স্পীকার সিস্টেমে।
৭।ইলেক্ট্রিক্যাল ট্রান্সডিসার হিসাবে LVDT এলভিডিটিতে।
উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট হতে তথ্য, ছবি সংগৃহীত
No comments:
Post a Comment