বিভিন্ন প্রকার বাসবার ব্যবস্থাপনা
১। সিঙ্গেল বাসবার ব্যবস্থাপনা
২। মেইন এবং ট্রান্সফার বাসবার ব্যবস্থাপনা
৩। ডাবল ব্রেকার বিশিস্ট্য ডাবল বাসবার ব্যবস্থাপনা
৪। ওয়ান অ্যান্ড হাফ ব্রেকার বাসবার ব্যবস্থাপনা
৫। রিং মেইন বাসবার ব্যবস্থাপনা
৬। সেকশনালাইজড সিঙ্গেল বাসবার ব্যবস্থাপনা
৭। সেকশনালাইজড ডাবল বাসবার ব্যবস্থাপনা
৮। মেস বাসবার ব্যবস্থাপনা
- সিঙ্গেল বাসবার ব্যবস্থাপনাঃ এ ব্যবস্থাপনায় জেনারেটিং স্টেশনের পুরো সিস্টেমের জন্য মাত্র একসেট বাসবার ব্যবহৃত হয়। বাসবারের সাথে সকল জেনারেটর, ট্রান্সফরমার এবং ফিডার সংযুক্ত থাকে। নীতিগত ভাবে সকল জেনারেটর, সার্কিট ব্রেকার ও আইসোলেটরের মাধ্যমে বাসবার সংযুক্ত হয়। আউটগুইং বা নির্গত ফিডারে সংযুক্ত ট্রান্সফরমারের উভয় পাশে আইসোলেটর থাকে। ছোট ছোট এ সি জেনারেটিং স্টেশনে এবং ডিসি স্টেশনে এ ধরনের বাসবার ব্যবহৃত হয়।
সুবিধা সমূহ ঃ
১। প্রতিটি ফিডারে একটি মাত্র সার্কিট ব্রেকারের প্রয়োজন হয় এতে খরচ কম হয়।
২। রিলে ব্যবস্থাপনা সহজ ও সরল ।
৩। পরিচালনা কার্যক্রম অনেক সহজ।
৪। সার্কিট ব্রেকারের সংখ্যা কম বলে এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম।
৫। বাসবার ভোল্টেজকে রিলে পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা হয়।
অসুবিধা সমূহ ঃ
১। বাসবারে কোন সমস্যা দেখা দিলে সম্পূর্ণ সিস্টেম বন্ধ করতে হয়।
২। সচল বাসবার নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা কঠিন । রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনে পুরো সিস্টেম সরবরাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হয়।
৩। কোন একটি সার্কিট ব্রেকার মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হলে সার্কিট ব্রেকারে সংযুক্ত সার্কিটকে বাসবার থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে।
৪। পূর্বের বাসবারে নতুন সার্কিট সংযোজনের ক্ষেত্রে বাসবারটি সরবরাহ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং আরথিং সুইচ দিয়ে নিষ্ক্রিয় করতে হয়।
- মেইন এবং ট্রান্সফার বাসবার ব্যবস্থাপনাঃ বর্তমানে প্রায় সকল আধুনিক জেনারেটিং স্টেশনে দুটি বাসবার থাকে। যার একটি প্রধান বাসবার এবং অন্যটি ট্রান্সফার বাসবার, যা সাহায্যকারী হিসাবে থকে বা কাজ করে। স্বাভাবিক অবস্থায় প্রধান বাসবারটি লোড বহন করে এবং ট্রান্সফার বাসবার বা সাহায্যকারী বাসবারটি রিজার্ভ থাকে। প্রধান বাসবারে কোন সমস্যা দেখা দিলে বা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হলে বাস কাপলারের সাহায্যে পুরো লোড অক্সিলারি বাসবারে বা ট্রান্সফার বাসবারে স্থানান্তর করা হয়।
সুবিধা সমূহ ঃ
১। এতে নিরবচ্ছিন্ন পাওয়ার সরবরাহ রাখা যায়।
২। সরবরাহ অবিচ্ছিন্ন রেখেই সার্কিট ব্রেকার রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়।
৩। যে কোন বাসবারে সার্কিট সংযোজন করা যায়।
৪। এ ব্যবস্থাপনায় সাব-স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম।
৫। রিলের জন্য বাসবার ভোল্টেজ ব্যবহার করা যায়।
অসুবিধা সমূহ ঃ
১। প্রধান বা মেইন বাসবার থেকে অক্সিলারি বা ট্রান্সফার বাসবারে পাওয়ার স্থানান্তরের সময় যে কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
২। এর পরিচালনা কার্যক্রম জটিল।
- ডাবল ব্রেকার বিশিস্ট্য ডাবল বাসবার ব্যবস্থাপনাঃ অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন ও গুরুত্বপূর্ণ জেনারেটিং স্টেশনে ডাবল বাসবার ব্যবস্থাপনা ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের ডাবল বাসবার ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি সার্কিটে দুটি সার্কিট ব্রেকার থাকে। কিন্তু সরবরাহ স্থানান্তরের জন্য এতে কোন বাস কাপলারের দরকার হয় না। এখানে সার্কিট ব্রেকার গুলো সর্বচ্চ রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধা প্রদান করে কিন্তু ব্যবস্থাপনাটি খুব ব্যয়বহুল। দুটি সার্কিট ব্রেকার থাকায় কোন একটি সার্কিট ব্রেকারের রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হলে অন্য সার্কিট ব্রেকারটি সম্পূর্ণ লোড বহন করে।
সুবিধা সমূহ ঃ
১। সিস্টেমের সরবোচ্চ নমনীয়তা ও বিশ্বস্ততা পাওয়া যায়।
২। সিস্টেমের যে কোন সমস্যা বা রক্ষণাবেক্ষণের সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট নুন্যতম পর্যায়ে রাখা যায়।
অসুবিধা সমূহ ঃ
১। তুলনামূলক এর স্থাপন খরচ বেশী।
২। এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশী।
- ওয়ান অ্যান্ড হাফ ব্রেকার বাসবার ব্যবস্থাপনাঃ এ ব্যবস্থাপনায় প্রতি দুটি ফিডারের জন্য তিনটি সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা হয়। তাই চারটি ফিডারের জন্য ছয়টি সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা হয়। এখানে প্রতিটি ফিডারের জন্য ৬/৪=১.৫টি সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা হয় বলে একে ওয়ান অ্যান্ড হাফ ব্রেকার বাসবার ব্যবস্থাপনা বলে।
সুবিধা সমূহ ঃ
১। এ পদ্ধতি ডাবল বাসবার ও ডাবল ব্রেকার ব্যবস্থাপনার চাইতে কম ব্যয়বহুল ।
২। সার্কিট ব্রেকারে বা বাসবারে ত্রুটির জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয় না।
৩। এ পদ্ধতিতে অতিরিক্ত সার্কিট সংযোগ সম্ভব ।
৪। এ ব্যবস্থায় রিলে গুলোতে বাসবার ভোল্টেজ ব্যবহার করা যায়। তবে বাসবারে ত্রুটি দেখা দিলে রিলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হয় এবং ত্রুটি মুক্ত বাসবারে সংযোগ দিতে হয়।
অসুবিধা সমূহ ঃ
১। বাসবার ত্রুটিপূর্ণ অবস্থায় দুটি সার্কিট ব্রেকার বিচ্ছিন্ন করতে হয় বিধায় সিঙ্গেল বাসবার ব্যবস্থাপনার তুলনায় রিলে পরিচালনা বেশ জটিল হয়।
২। এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশী।
৩। লোড শেডিং না করে সার্কিট ব্রেকার রক্ষণাবেক্ষণ বা মেরামত করতে হলে দুটি সার্কিট ব্রেকার বিচ্ছিন্ন করতে হয় এবং একটি মাত্র সার্কিট ব্রেকারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখতে হয়। ফলে চলমান একটি বাসবারে ত্রুটি দেখা দিলে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
রিং মেইন বাসবার ব্যবস্থাপনা ঃ সেকশনালাইজড ডাবল বাসবার পদ্ধতির উন্নততর সংস্করণ হচ্ছে রিং মেইন বাসবার ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। এই ব্যবস্থাপনায় সেকশনালাইজড ডাবল বাসবারের শেষ প্রান্ত দ্বয়ে বাস কাপলার স্থাপন করায় রিং আকারের সংযোগের সৃষ্টি হয়। এর ফলে সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনা যথেষ্ট নমনীয় হয়। এই পদ্ধতিতে যে কোন বাসবার সেকশনে সংযোগকৃত অল্টারনেটরকে যে কোন সেকশনের ফিডারে সরবরাহ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।
সুবিধা সমূহ ঃ
১। স্বল্প খরচে সকল ফিডারে দুই দিক থেকে সরবরাহ দেয়া যায়।
২। যে কোন বাসবার সেকশনের সার্কিট ব্রেকার নষ্ট হলে বা ত্রুটি যুক্ত হলে শুধু মাত্র ঐ ত্রুটি যুক্ত সার্কিটকে সিস্টেম থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয় অথচ এতে অন্যান্য সার্কিটের উপর কোন প্রভাব পরে না।
৩। সরবরাহ বিঘ্নিত না করে সার্কিট ব্রেকার মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়।
৪। সংখ্যার দিক থেকে সার্কিট ব্রেকারের পরিমাণ প্রায় সিঙ্গেল বাসবার পদ্ধতির মত বলে এ ব্যবস্থাপনায় খরচ খুবই কম।
অসুবিধা সমূহ ঃ
১। প্রতিটি রিলের জন্য আলাদা সরবরাহ ভোল্টেজ প্রয়োজন হয়। যে কোন একটি সেকশনে সার্কিট ব্রেকার বন্ধ/বিচ্ছিন্ন করার সময় একদিকে পাওয়ার প্রবাহের কারনে অন্য সার্কিটের ফিডারে অতিরিক্ত লোডের জন্য সার্কিট ব্রেকার ট্রিপ করার সম্ভাবনা থাকে।
২। রিং এর মধ্যে নতুন সার্কিট সংযোজন করা কষ্টকর।
সেকশনালাইজড সিঙ্গেল বাসবার ব্যবস্থাপনাঃ এ ব্যবস্থাপনায় বাসবারের কোন অংশ মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হলে সম্পূর্ণ সিস্টেমের সরবরাহ বিচ্ছিন্ন বা বিঘ্নিত না করে শুধু মাত্র ত্রুটি যুক্ত অংশে সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করে কাজ করা যায়। এ জন্য সাধারনত সাব-স্টেশনের বাসবারকে প্রয়োজনমত দুটি বা তিনটি সেকশনে বিভক্ত করা হয়। সিস্টেমের শর্ট সার্কিট কারেন্টের উপর এটি নির্ভর করে। বাস কাপ্লারের সাহায্যে পুরো বাসবারটিকে কয়েকটি অংশে ভাগ করে নেওয়া হয়। বাস কাপ্লার মুলত সার্কিট ব্রেকার ও আইসোলেটরের সমন্বয় মাত্র। বাস কাপ্লারের উভয় পাশের বাসবার অংশকে আগুনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বাস কাপ্লারের চার পাশে ফায়ার প্রুফ দেয়াল থাকে। এখানে উল্লেখ্য যে, লোড শেয়ারিং এর সময় বাস কাপ্লার সুইচ বন্ধ করার পূর্বে উভয় অংশ সিনক্রোনাইজড করা হয়।
সুবিধা সমূহ ঃ
১। বাসবারের কোন অংশে ত্রুটি দেখা দিলে অন্য অংশের সরবরাহ বিচ্ছিন্ন না করে শুধু মাত্র ত্রুটি যুক্ত অংশকে সিস্টাম থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়।
২। একটি মাত্র অতিরিক্ত সার্কিট ব্রেকারের প্রয়োজন হয়, কাজেই খরচ কম।
৩। এর পরিচালনা কার্যক্রম সহজ-সরল।
৪। রক্ষণাবেক্ষণ করা সহজ ও খরচ তুলনামূলক কম।
৫। এ ব্যবস্থাপনায় সেকশনের দরুন ফল্ট কারেন্টের মান কম হয় বিধায় কম ক্ষমতা সম্পন্ন সার্কিট ব্রেকার ফিডারে যুক্ত করা যায়।
৬। লাইন রিলে গুলোতে পোটেনশিয়াল বাসবার ব্যবহার করা যায়।
অসুবিধা সমূহ ঃ
১। বাসবারে ত্রুটি হলে অর্ধেক অংশে পাওয়ার সরবরাহ বন্ধ থাকে।
২। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের সময়ও একটি অংশে সরবরাহ বিচ্ছিন্ন রাখতে হয়।
৩। কোন সেকশনের সার্কিট ব্রেকার রক্ষণাবেক্ষণ, পরিবর্তন বা পরিবর্ধনের সময় সংশ্লিষ্ট বাসবার সেকশনকে নিষ্ক্রিয় করতে হয়।
- সেকশনালাইজড ডাবল বাসবার ব্যবস্থাপনাঃ এ পদ্ধতিতে দুটি বাসবার থাকে, একটি প্রধান বাসবার অন্যটি অক্সিলারি বাসবার। প্রধান বাসবারটি বাস কাপ্লারের সাহায্যে ভাগ করা হয়। কিন্তু অক্সিলারি বাসবারটিকে বিভক্ত করা হয় না বা বিভক্ত করার প্রয়োজন পরে না কারন এর বিভক্তি করন অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
সুবিধা সমূহ ঃ
১। এ পদ্ধতির যে কোন অংশকে পৃথক ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়।
২। অক্সিলারি বাসবারের সাহায্যে যে কোন একটি সেকশনকে অন্য সেকশনের সাহায্যে সিনক্রোনাইজড করা যায়।
- মেস বাসবার ব্যবস্থাপনাঃ সাব-স্টেশনে সার্কিট ব্রেকার পরিমিত ব্যবহারের অন্যতম পদ্ধতি হচ্ছে মেস বাসবার ব্যবস্থাপনা। মেস বাসবার ব্যবস্থাপনায় সার্কিট ব্রেকার গুলোকে বাসবারে মেশ আকারে স্থাপন করা হয়। সার্কিট গুলো মেশ সংযোগের নোড বিন্দু হতে টেপড করা থাকে। চিত্রে আটটি ফিডারকে চারটি সার্কিট ব্রেকার দ্বারা নিয়ন্ত্রন দেখানো হয়েছে। সার্কিটের কোন অংশের ত্রুটির সময় সার্কিট ব্রেকার বিচ্ছিন্ন করতে হয়, ফলে মেশ সংযোগ খুলে যায়। চারটি সার্কিট ব্রেকার দ্বারা আটটি সার্কিট নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে।
বাসবার নির্বাচনে লক্ষণীয় জিনিস/বিষয় গুলোঃ
১। প্লান্ট পরিচালনার প্রয়োজন অনুযায়ী পূর্ণ বা কিছু অংশ চালু রাখার সুবিধা থাকতে হবে।
২। স্থানীয় অবস্থা ও লোডের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
৩। পরিচালনার ক্ষেত্রে নমনীয়তার পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
৪। বাসবারের আকার-আকৃতি নির্ধারণ করতে হবে।
৫। বাসবার স্থাপনের প্রথমিক খরচ, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ এবং সহজ প্রাপ্যতা নিধারন করতে হবে।
৬। রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধা ও কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৭। নির্মাণে সরলতা ও স্পস্টতা নিশ্চিত করতে হবে।
৮। ভবিষ্যতে বর্ধিত করনের সুবিধা থাকতে হবে।
৯। নিরাপদ এলাকা সুনিদিস্ট করতে হবে।
সংগৃহীত
No comments:
Post a Comment